Sea fish price in Dhaka, Bangladesh
“SEA FISH” নিয়ে কিছু ভাবতে গেলে প্রথমেই মায়ের হাতের রান্না করা ইলিশের কথা খুব মনে পড়ে। যখনই মাকে মনে পড়ে দেখতে পাই মায়ের হাতে ইলিশ ফ্রাই। যখন ইলিশ দেখি তখনই মা’কে ভেবে চোখ ভিজে যায়। এখন ইলিশের মৌসুম। পথে, ঘাটে, হাটে, মাঠে সব যায়গাতে ইলিশের ছড়াছড়ি। ইলিশ খুব সুস্বাধু একটি মাছ। এ মাছের আশ ছাড়া প্রায় কিছুই ফেলতে হয়না। এক কথায় সবই খাওয়ার যোগ্য। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। বাঙালিদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। ২০১৭-এ বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ইলিশ অর্থনৈতিক ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মমন্ডলীয় মাছ। বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মা-মেঘনা- যমুনা নদীর মোহনার হাওর থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা হয়।
এটি একটি সামুদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। ইলিশ মাছ সামুদ্রিক হলে এই মাছ বড় নদীতে ডিম দেয়। ডিম ফুটে গেলে ও মাছ বড় হলে সাগরে ফিরে যায়। সাগরে ফিরে যাবার পথে জেলেরা এই মাছ ধরে। মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের অংশ হিসেবে প্রতিবছর ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে এই মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এই কর্মসূচি ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে। যদিও ইলিশ সামুদ্রিক ও লবণাক্ত জলের মাছ বেশিরভাগ সময় সে সাগরে থাকে কিন্তু বংশ বিস্তারের জন্য প্রায় ১২০০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে বাংলাদেশের নদীতে পাড়ি জমায়। ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের পদ্মা- গঙ্গার কিছু অংশ, মেঘনা- ব্রহ্মপুত্রের কিছু অংশ এবং গোদাবরী নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এর মধ্যে পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভালো। ভারতের রূপনারায়ণ নদী, গঙ্গা, গোদাবরী নদীর ইলিশ তাদের সুস্বাদু ডিমের জন্য বিখ্যাত। ইলিশ মাছ সাগর থেকেও ধরা হয় কিন্তু সাগরের ইলিশ নদীর মাছের মত সুস্বাদু হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুললেই ইদানীং ইলিশের ছবিসহ পোস্ট দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। বাজারেও সব মাছ ছাপিয়ে রুপালি ইলিশ যেন রাজার আসনে। শুধু তাই নয়, এবার বাজারে ইলিশের আকারও বড় দামও তুলনামূলক কম।
মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের চলতি মাসের হিসাবে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। অথচ চার বছর আগেও বিশ্বের মোট ইলিশের উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ হত বাংলাদেশ থেকে। এই সময়ের মধ্যে এখানে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন। সে তুলনায় প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ইলিশের উৎপাদন কমেছে। ইলিশ খুব গভীর পানির মাছ। খুব ছোট বেলায় জেলেদের নৌকাতে করে গভীর নদীতে ইলিশ ধরা দেখার সুযোগ হয়েছিল। ইলিশ খুব আদুরে একটি মাছ। সে একদম রোদ সইতে পারেনা। জেলেদের জাল যখন ইলিশসহ জল থেকে তুলে আনে তখনই রোদ দেখেই সে আহত হয় খুব সহসা মারাও যায়। একটি পরিপূর্ণ ইলিশ মাছে রয়েছে ২১.৮ গ্রাম প্রোটিন, ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.৩৯ গ্রাম শর্করা, ২.২ গ্রাম খনিজ ও ১৯.৪ গ্রাম চর্বি। এ ছাড়া বিভিন্ন খনিজ, খনিজ লবণ, আয়োডিন ও লিপিড। বিভিন্ন প্রাণীর প্রতি ১০০ গ্রাম মাংসে খাদ্যশক্তির উপস্থিতির তুলনায় ইলিশ মাছে রয়েছে সবচেয়ে বেশি খাদ্যশক্তি। শরীর গঠন ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে ইলিশ মাছ প্রোটিন ও অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করে। ইলিশে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ডি। ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং ডি শিশুদের রিকেট রোগ থেকে রক্ষা করে। খনিজ, বিশেষ করে ফসফরাস দাঁত ও লৌহ স্বাভাবিক শরীর বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন যে, ভ্রূণের উপযুক্ত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইলিশের তেল অত্যন্ত উপকারী। হৃদরোগ কমানোর ক্ষেত্রে এ তেলের ক্ষমতা অপরিসীম।
ইলিশ এমনই একটি মাছ যা আমার কাছে খুবই লোভনীয়। যার মাথা খেলে মনে হয় লেজ কেন খেলাম না, পিঠের মাছ খেলে মনে হয় পাশের মাছ কেন পেলাম না। ইলিশ মাছ ভাজা এবং শুটকি বাংগালীর উতসব পহেলা বৈশাখের জনপ্রিয় একটি খাবার। ইলিশ হরেক রকমের রান্না হয়- সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, কড়া ভাজা, দোপেয়াজা এবং ঝোল খুবই জনপ্রিয়। কচুর পাতা এবং ইলিশ মাছের কাটা, মাথা ইত্যাদির ঘন্ট একটি বিশেষ রান্না। ডিম ভর্তি ইলিশ মাছ এবং সুগন্ধি চাল দিয়ে বিশেষ একরকম রান্না করা হয় যা ভাতুরী বা ইলিশ মাছের পোলাও নামে পরিচিত। এটি বর্ষাকালের একটি বিশেষ রান্না। ইলিশ মাছ টুকরো করে লবনে জারিত করে অনেক দিন সংরক্ষণ করেও খাওয়া হয়। বাংলাদেশে এই ইলিশ ভাপে, ভেজে, সিদ্ধ করে, কচি কলা পাতায় মুড়ে পুড়িয়ে, সরিষা দিয়ে, জিরা, বেগুন, আনারস দিয়ে এবং শুঁকিয়ে শুটকি করে, আরো বিভিন্ন প্রণালীতে রান্না করা হয়। বলা যায় ইলিশ মাছের প্রায় ৫০ রকম রন্ধনপ্রণালী রয়েছে। ইলিশের ডিমও খুব জনপ্রিয় খাবার। এই মাছ রান্না করতে খুব অল্প তেল প্রয়োজন হয়। গ্রাম দেশে প্রবাদ আছে ইলিশ মাছ বাকা আর চিংড়ি মাছ ছ্যাকা। অরথাত অল্প সময়ে রান্না করেই এ মাছ খাওয়া যায়।
সবার আগে আমাদের তাজা মাছ খাওয়া উচিৎ। অবশ্যয় এটা হতে হবে ফরমালিন মুক্ত এবং এন্টিবাইটিক হীন। ফার্ম এর মাছে অনেক সময়ে এন্টিবাইটিক পাওয়া যায় । তাই সঠিক উৎস্য থেকে যেমন হাওড়, লেক, নদী এবং সমুদ্রের মাছ যোগাড় করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে সিফিস বিডি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এখানে অর্ডার করা খুবই সহজ। শুধু মাত্র কল করুন (+৮৮০ ১৭৯০ ৮৮৫ ১৮৮) , মেসেজ করুন , ইমেইল করুন (rasheda.saraf@gmail.com) । আপনার অর্ডার যা কিনা সম্পূর্ণ ন্যাচারাল প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত এবং প্যাকেট করা হয় এবং চলে আসবে সঠিক ঠিকানায়।
অসখ্য ধন্যবাদ সবাইকে কস্ট করে পড়ার জন্য।
নিবন্ধ লেখক:
জান্নাতুল ফেরদৌস
jannatul.fardous.erlpr@gmail.com